অনেকক্ষণ বৃষ্টি থেমে গেছে
বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ
ফুটো চাল দিয়ে আর জল গড়িয়ে পড়বে না
খোকা কে শুইয়ে দাও।

খোকা কে শুইয়ে দাও
তোমার বুকের ওম থেকে নামিয়ে
ঐ শুকনো যায়গাটায়, শুইয়ে দাও,
গায়ের ঐ কাঁথাটা টেনে দাও
অনেকক্ষণ বৃষ্টি থেমে গেছে।

মেঘের পাশ দিয়ে কেমন সরু চাঁদ উঠেছে
তোমার ভুরুর মতো সরু চাঁদ
তোমার চুলের মতো কালো আকাশে,
বর্ষার ঘোলা জল মাঠ ভাসিয়ে নদীতে মিশে গেছে
কুমোর পাড়ার বাঁশের সাঁকোটা ভেঙে গেছে বোধ হয়
বোধ হয় ভেসে গেছে জলের তোড়ে
অভাবের টানে যেমন আমাদের আনন্দ ভেসে যায়।

নলবনের ধার দিয়ে
পানবরোজের পাশ দিয়ে
গঞ্জের স্টীমারের আলো—
আলো পড়েছে ঘোলা জলে
রামধনুর মতো
রামধনুর মতো এই রাত্রিরবেলা।
ধানক্ষেত ভাসিয়ে জল গড়ায় নদীতে
স্টীমারের তলায়
আমাদের অভাবের মতো
ঠিক আমাদের কপালের মতো।
আমাদের পেটে তো ভাত নেই
পড়নের কাপড় নেই
খোকার মুখে দুধও তো নেই এক ফোঁটাও
তবু কেন এই গঞ্জ হাসিতে উছলে ওঠে ?
তবু কেন এই স্টীমার শস্যতে ভরে ওঠে ?
আমাদের অভাবের নদীর উপর দিয়ে
কেন ওরা সব পাঁজরকে গুঁড়িয়ে যায় ?

শোনো,
বাইরে এসো,
বাঁকের মুখে পরাণ মাঝি হাঁক দিয়েছে
শোনো, বাইরে এসো,
ধান বোঝাই নৌকা রাতারাতি পেরিয়ে যায় বুঝি
খোকাকে শুইয়ে দাও।
বিন্দার বৌ শাঁখে ফুঁ দিয়েছে।
এবার আমরা ধান তুলে দিয়ে মুখ বুজিয়ে মরবো না
এবার আমরা প্রাণ তুলে দিয়ে অন্ধকারে কাঁদবো না
এবার আমরা তুলসীতলায় মনকে বেঁধে রাখবো না।

বাঁকের মুখে কে যাও, কে ?
লণ্ঠনটা বাড়িয়ে দাও
লণ্ঠনটা বাড়িয়ে দাও!
আমাদের হাঁকে রূপনারায়ণের স্রোত ফিরে যাক
আমাদের সড়কিতে কেউটে আঁধার ফর্সা হয়ে যাক
আমাদের হৃৎপিণ্ডের তাল দামামার মতো
ঝড়ের চেয়ে তীব্র আমাদের গতি।
শাসনের মুগুর মেরে আর কত কাল চুপ করিয়ে রাখবে ?
এসো,
বাইরে এসো—
আমরা হেরে যাবো না
আমরা মরে যাবো না
আমরা ভেসে যাবো না
নিঃস্বতার সমুদ্রে একটা দ্বীপের মতো আমাদের বিদ্রোহ
আমাদের বিদ্রোহ মৃত্যুর বিভীষিকার বিরুদ্ধে—

এসো, বাইরে এসো
আমার হাত ধরো
পরাণ মাঝি হাঁক দিয়েছে।