হাওয়াদের বাড়ি নেই, হাওয়াদের বাড়ি নেই,
নেই রে।
তারা শুধু কেঁদে মরে বাইরে।
সারা-দিন-রাত্তির
বুক চাপা কান্নায়
নিশ্বাস ব’য়ে যায় উত্তাল, অস্থির—
সে কোথায়, সে কোথায়, হায় রে।

বলে তারা, ‘পৃথিবীর সব জল, সব তীর
ছুঁয়ে গেছি বার-বার দুর্বার ইচ্ছায়,
সব জল, সব তীর, পাহাড়ের গল্প নেই
তবু নেই, সে তো নেই, নেই রে।
সব জল, সব তীর, পাহাড়ের গম্ভীর
কন্দর, বন্দর, নগরের ঘন ভিড়,
অরণ্য, প্রান্তর, শূন্য তেপান্তর –
সব পথে ঘুরেছি বৃথায় রে।

পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝর্ঝর,
শার্সিতে কেঁপে-ওঠা দেয়ালের পঞ্জর
চিমনির নিস্বনে, কাননের ক্রন্দনে
তার কথা কেবলি শুধাই রে।
তেমনি মিষ্টি ছেলে দোলনায় ঘুম যায়,
আবছায়া কার্পেট কুকুরের তন্দ্রায়,
ঘরে-ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মোম-
সে-ই শুধু নিয়েছে বিদায় রে।

আঁধারে জাহাজ চলে, মাস্তুলে জ্বলে দীপ,
যাত্রীরা সিনেমায়, কেউ নাচে গান গায়;
আমরা তরঙ্গের বুকে হানি প্রশ্নের
অবিরাম নর্তন, মত্ত আবর্তন-
সে কোথায়, সে কোথায়, হায় রে!

অবশেষে থামে সব, ডেক হয় নির্জন,
অকূল অন্ধকারে ফেটে পড়ে গর্জন,
সমুদ্র ওঠে দুলে, বাঁকা চাঁদ পড়ে ঝুলে—
আমাদের বিশ্রাম নেই রে
আমাদের বাড়ি নেই, দেশ নেই, শেষ নেই,
কেঁদে-কেঁদে মরি শুধু বাইরে,
বার-বার পারাপার যত করি তবু তার
নেই, নেই, দেখা নেই, নেই রে!

সময় অন্তহীন, অফুরান সন্ধান,
বিশ্বের বুক ফেটে ব’য়ে যায় এই গান
কোন্‌খানে গেলে তারে পাই রে!
খুঁজে খুঁজে ঘুরে ফিরি বাইরে,
সুরে-সুরে ব’লে যাই— ‘নেই রে,
চিরকাল উত্তাল তাই রে।’