উপস্থিত সম্মানীয় সভাপতি, শ্রদ্ধেয় বিচারকমণ্ডলীগন এবং আমার প্রিয় সহ-বিতার্কিরা। আমি আজকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই জলপাইগুড়ি সমবায়সমিতি ইউনিয়নকে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্কসভা আয়োজন করার জন্য। আজকের বিষয় “সমবায় সমিতির মাধ্যমে যুবসমাজের উন্নয়ন “। আমি বিতর্কের বিষয়ের সাথে পুরোপুরি সহমত – সমবায় সমিতির মাধ্যমে যুবসমাজের উন্নয়ন সম্ভব এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রিয় বিতার্কিকদের সামনে আমার কিছু বক্তব্য রাখতে চাই।

সম্মানীয় সভাপতি, আমরা সবাই জানি – ভারতবর্ষে সমবায় সমিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতে সমবায় সমিতির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। ২০২১-২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে সমবায় সমিতির সংখ্যা ৮.৫ লাখের বেশি। গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৯১% মানুষ কোনো না কোনো সমবায় সমিতির সঙ্গে যুক্ত। মোট জনসংখ্যার ১৩ কোটি মানুষ সরাসরি এর সাথে যুক্ত।

সম্মানীয় সভাপতি, এ সংখ্যাটা শুধুমাত্র সংখ্যা নয়। এই সংখ্যাটা ভারতে সমবায় সমিতির সাফল্যের একটি গৌরবময় স্তম্ভ।

সম্মানীয় সভাপতি, উন্নয়ন বলতে কি বোঝায়? আমরা সাধারণত উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বুঝি। যুবসমাজের উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে আজ আমি বলতে চাই, শুধুই কথায় নয়- তথ্য দিয়ে জানাতে চাই- সমবায় সমিতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি যুবসমাজের সামাজিক উন্নতিতেও সাহায্য করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – যুবসমাজের মধ্যে সমষ্টিবোধ তৈরি করেছে যা সমবায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পয়েন্ট ১

সম্মানীয় সভাপতি, আমরা সবাই আমুল এর নাম শুনেছি। এই সমবায় সমিতি যুবসমাজের মধ্যে শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমুল ডেয়ারি ফার্মিং এবং মিল্ক পোসেসিং এর সাথে যুক্ত মানুষদেরকে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এই সমিতির সাথে যুক্ত থাকতে থাকতে যুবক-যুবতীরা এই শিল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও দক্ষতা লাভ করে, যা এই ডেয়ারি শিল্পের জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে।

পয়েন্ট ২

সমবায় সমিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল যুব উদ্যোগপতিদেরকে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রদান করা। উদাহরণ হিসাবে এখানে ইফকো (IFFCO) র কথা বলব যা সারা দেশে যুব কৃষকদের সার ও অন্যান্য কৃষি সামগ্রী প্রদান করে। এছাড়াও ট্রেনিং, interest free loan, স্কলারশিপ,  মার্কেটিং লিংক -এর ব্যবস্থা করেছে যা যুবসমাজকে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করার উৎসাহ প্রদান করছে। এটি যুব সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছে।

পয়েন্ট ৩

সম্মানীয় সভাপতি,  যুব সমাজের উন্নয়নে যে সমবায় সমিতির কথা না বললেই নয়, তা হল SEWA.( The Self- Employed Women’s Association)।  এই সমিতি অসংখ্য বেকার যুবতীদের সেলাই মেশিন, কাপড় তৈরি ও ডেয়ারি ফার্মিং -এর কাজের  মাধ্যমে সম্মানের সাথে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছে। SEWA-র এই উদ্যোগ যুব সমাজকে শুধুমাত্র সামাজিক সিঁড়ির উপরে পৌঁছে দেয়নি, প্রান্তিক শ্রেণীর যুব সমাজের সামাজিক ও অর্ধনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ICWS ( Indian Women’s Cooperative Society) র নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পয়েন্ট ৪

সম্মানীয় সভাপতি, আমরা কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের কথা জানি। কিন্তু যে সমবায় সমিতি কৃষি উদ্যোগপতি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তা হল NAFED। যুব সমাজকে তাদের ফসল উৎপাদন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বিশেষভাবে সাহায্য করে NAFED যা যুব সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি ভারতের কৃষি ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন এনেছে।

পয়েন্ট ৫

আমদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই পানীয় হিসাবে কফি গ্রহণ করে থাকি । আর এই কফি বেসড সমবায় সমিতি দ্য ইন্ডিয়ান কফি হাউস  গ্রাম ও শহরের সমস্ত শ্রেণির যুবসমাজের জন্য তাদের আউটলেট খুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সমবায় সমিতি ভারতের ট্রাডিশনাল কফি কালচারকেই বাঁচিয়ে রাখেনি, দূর করেছে গ্রাম ও শহরের যুবকদের মধ্যে বৈষম্য, তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে।

সম্মানীয় সভাপতি, আমার বিজ্ঞ প্রতিপক্ষরা বললেন(বলবেন), ডেটা কোথায়?  আসলেই আমি তিলকে তাল করার চেষ্টা করছি। তাই আমি আরও কিছু যুক্তি ও তথ্য প্রদান করছি আজকের এই বিষয়ের পক্ষে।

সমবায় সমিতির গঠনের উদ্দেশ্যই হল সদস্যদের ব্যক্তিগত উন্নতি এবং তার পাশাপাশি সমষ্টিগত উন্নতি। এক্ষেত্রে সমবায় সমিতি যুবকের মধ্যে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য Participation, Involvement, Decision Making এর সুবিধা প্রদান করে যা তাদের মধ্য leadership skill, Team Work Qualities তৈরি করে।

কৃষি, বস্ত্রশিল্প, শিল্পোদ্যোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমবায় সমিতি যুবসমাজকে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদানের সুযোগ দেয়। যা ভবিষ্যতে তাদেরকে Problem Solving, Negotiations এবং Communication ইত্যাদি স্কিল ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে। এটি পার্সোনাল ও প্রোফেশনাল গ্রোথ -এ ভীষণ সহায়ক।

Youth For Agriculture নামে পাঞ্জাবের একটি সমবায় সমিতি যুব কৃষকদের সমস্যা ও সমাধানে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা একে অপরের শেয়ারের পাশাপাশি Organic Farming এবং Crop Diversification এর মতো অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যা তাদের নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও Sustainable Development র একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Youth Consumer Cooperative নামে দিল্লির একটি সমবায় সমিতি যুবসমাজের উন্নয়নে ও তাদের যোগদান বাড়াতে তাদের এলাকায় বিভিন্ন জিনিসপত্র ন্যায্য দামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে যা মধ্যস্থতা শ্রেণিকে কমিয়ে এনেছে। এই সমবায় সমিতি শুধুমাত্র গ্রাহকদের সুবিধা প্রদান করেছে তা নয়, যুবসমাজের জন্য অনেক কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করেছে।

সম্মানীয় সভাপতি, আজকের যুব সমাজ আগামীর ভবিষ্যৎ। আর এই ভবিষ্যতের ভিত গড়তে সমবায় সমিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন অতীতে করেছে- বর্তমানে করছে – এবং ভবিষ্যতে করেই যাবে।  পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, সমবায় সমিতি যুবসমাজের জন্য রোজগার বৃদ্ধি করে, স্বনির্ভরতা নিয়ে আসে, পেশাদারিত্ব বাড়ায়, কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে,  এবং আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন ঘটায়। তাই আমার মনে হয়, সমবায়ের উন্নতি হলে যুবসমাজের উন্নতি হয়- আর যুবসমাজের উন্নতির মাধ্যমে দেশের ও দশের উন্নয়ন হয়। ধন্যবাদ।

বিপক্ষে👉 Click here