‘ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে,/ ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরেই অন্তরে।”- গোলাম মোস্তাফা

ভূমিকাঃ ছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। মানুষের জীবনকে যদি একটি বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে ছাত্রজীবন হল সেই বৃক্ষের মূল। ছাত্রজীবনের পরিশ্রম ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত মজবুত করে। জীবনকে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরে তোলার শিক্ষা মানুষ ছাত্রজীবন থেকে পায়। বদান্যতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মহানুভবতার শুরু ছাত্র জীবন থেকেই। ছাত্রসমাজ তাদের শিক্ষা, চেতনা ও কর্মের মাধ্যমে দেশ ও সমাজের অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়।  তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার ও সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ “ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানুষের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের সর্বোত্তম সময়। এই সময়ে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তাই জীবনের এই মূল্যবান সময়টুকু কোনোভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়। তবে শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করলেই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল জ্ঞানার্জন করে একজন আদর্শ মানুষ হওয়া। আর সেই জন্য প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে হতে হবে সৎ, চরিত্রবান, আত্মবিশ্বাসী, নম্র-ভদ্র, বিনয়ী ও পরোপকারী।

পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ  “Charity begins at home” ছাত্ররা পরিবারের কাছ থেকে যেমন অনেক কিছু শেখে ও পায় তেমনি পরিবারের প্রতিও তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। পিতামাতা সবসময়ই সন্তানদের ভালো চান। তাই তাদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে চলা প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর নৈতিক দায়িত্ব। বাবা -মা এবং পরিবারের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করা এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ করা তাদের কর্তব্য।

সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রসমাজই হল একটি দেশের সচেতন নাগরিক। আর সচেতন নাগরিক হিসাবে সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন – অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, অপুষ্টি, জনবিস্ফোরণ ইত্যাদি দূরীকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু পরিবার কিংবা সমাজ নয় ছাত্রসমাজকে পুরো জাতির নিরক্ষরতা দূরীকরণে সহায়তা করতে হবে। সমাজকে এবং শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দায়িত্ব ছাত্রদেরই কাঁধে নিতে হবে। বন্যায়, ঝড়-ঝঞ্ঝায়, মহামারীতে মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে সেবা করতে পারে ছাত্রসমাজই।

দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রসমাজ অনাচার, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। যুগে যুগে ছাত্রসমাজই দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছে। দেশ ও দশের স্বার্থে জনমত গঠনেও ছাত্রছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ছাত্র জীবনে স্বার্থত্যাগ ওদেশপ্রেমের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের জন্য যে কোনো সঙ্কট মুহূর্তে ত্যাগ স্বীকারে অনীহা আসবে না। তাই ছাত্রদের অবশ্যই দেশপ্রেম, ধর্মপরায়ণতা, উদারতা, জনগণের প্রতি ভালোবাসা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণের অধিকারী হতে হবে।

উপসংহারঃ মানুষের ভবিষ্যত জীবনের ভিত্তি তৈরি হয় ছাত্রজীবনে। আর একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেই দেশের দক্ষ ও সচেতন ছাত্রসমাজের উপর। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার গুরুদায়িত্ব ছাত্রসমাজকেই নিতে হবে। আর সেই গুরুদায়িত্ব পালন করার জন্য ছাত্রছাত্রীদেরকে অবশ্যই শিক্ষা, খেলাধুলা ছাড়াও আরও বহুবিধ গুণের অধিকারি হতে হবে। তবেই একটি দেশ ও জাতি উন্নতি সাধন করে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করতে পারবে।