তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।যেমন- পরলোকে গত= পরলোকগত

তৎপুরুষ সমাসের বৈশিষ্ট্যঃ

✍️ দুটি অন্বিত বা সম্পর্কিত পদ থাকে।

✍️ সাধারণত দুটি পদই বিশেষ্য হয়।

✍️প্রথমটি দ্বিতীয়টির অর্থকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।

✍️ তৎপুরুষ শব্দের অর্থ তার সম্পর্কীয় পুরুষ

তৎপুরুষ সমাস কত প্রকার ও কি কি?

তৎপুরুষ সমাস সাধারণত ৯ প্রকার।

  • ১.দ্বিতীয়া তৎপুরুষ বা কর্ম তৎপুরুষ
  • ২.তৃতীয়া তৎপুরুষ বা করণ তৎপুরুষ
  • ৩. চতুর্থী তৎপুরুষ বা উদ্দেশ্যবাচক তৎপুরুষ
  • ৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ বা অপাদান তৎপুরুষ
  • ৫. যষ্ঠী তৎপুরুষ বা সম্বন্ধ তৎপুরুষ
  • ৬. সপ্তমী তৎপুরুষ বা স্থান-কালবাচক তৎপুরুষ
  • ৭.উপপদ তৎপুরুষ
  • ৮. নঞ তৎপুরুষ
  • ৯.অলুক (অলোপ) তৎপুরুষ

এই ৯ (নয়) প্রকার তৎপুরুষ সমাস সম্পর্কে নিচে উদাহরণ সহযোগে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

১.দ্বিতীয়া তৎপুরুষ বা কর্ম তৎপুরুষঃ পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, এরে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বা কর্ম তৎপুরুষ বলে।

উদাহরণঃ

• দুঃখকে প্রাপ্ত= দুঃখপ্রাপ্ত,

• বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন,

• পরলোকে গত= পরলোকগত,

• গাকে ঢাকা=গা-ঢাকা,

• রথকে দেখা=রথদেখা,

• বীজকে বোনা= বীজবোনা,

• চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী= চিরসুখী (ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়) 

২. তৃতীয়া তৎপুরুষ বা করণ তৎপুরুষঃ পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

• মন দিয়ে গড়া= মন গড়া

• শ্রম দ্বারা লব্ধ= শ্রমলব্ধ

• মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা

• ঈশ্বর দ্বারা দত্ত= ঈশ্বরদত্ত

• ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা= ঢেঁকিছাঁটা

• আইন দ্বারা সংগত= আইনসংগত

• বায়ু দ্বারা চালিত= বায়ুচালিত 

৩. চতুর্থী তৎপুরুষ বা উদ্দেশ্যবাচক তৎপুরুষঃ পূর্বপদে চতুর্থ বিভক্তি (কে, রে) কিংবা নিমিত্তবাচক অনুসর্গ (নিমিত্ত, জন্য, উদ্দেশ্য) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

• রণের জন্য সজ্জিত=রণসজ্জিত।

• সর্বের জন্য হিত= সর্বহিত

• ডাকের জন্য মাশুল= ডাকমাশুল

• বালিকাদের নিমিত্ত বিদ্যালয়= বালিকাবিদ্যালয়

• শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য=শিশুসাহিত্য

• রান্নার নিমিত্ত ঘর= রান্নাঘর 

৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ বা অপাদান তৎপুরুষঃ পূর্বেপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ বলে।

উদাহরণঃ

  • বিলাত থেকে ফেরত= বিলাতফেরত

• স্কুল থেকে পালানো= স্কুলপালানো

• জেল থেকে মুক্ত= জেলমুক্ত

• স্বর্গ হতে চ্যুত-স্বর্গচ্যুত

• অগ্নি হতে ভয়-অগ্নিভয়

• পাপ থেকে মুক্ত= পাপমুক্ত 

৫. যষ্ঠী তৎপুরুষ বা সম্বন্ধ তৎপুরুষঃ 

পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণঃ

• চায়ের বাগান= চাবাগান

• রাজার পুত্র= রাজপুত্র

• খেয়ার ঘাট= খেয়াঘাট

• বামনের পাড়া=বামনপাড়া

• মাতার তুল্য=মাতৃতুল্য

• ফুলের গাছ=ফুলগাছ

• বটের তলা= বটতলা 

৬. সপ্তমী তৎপুরুষ বা স্থান-কালবাচক তৎপুরুষঃ  পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তির (এ, তে, এতে, য়) লোপ পেয়ে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। এই সমাসে পরপদের সঙ্গে পূর্বপদের অধিকরণ সম্পর্ক তৈরি হয়।

উদাহরণঃ

• গাছে পাকা=গাছপাকা

• গৃহে বন্দী=গৃহবন্দী

• মাথাতে ব্যথা=মাথাব্যথা

• গৃহে প্রবেশ=গৃহপ্রবেশ

• অকালে পক্ব=অকালপক্ব

• সংখ্যায় গরিষ্ঠ=সংখ্যাগরিষ্ঠ

• জলে মগ্ন= জলমগ্ন 

৭.উপপদ তৎপুরুষঃ উপসর্গ ভিন্ন শব্দকে উপপদ বলে। এভাবে উপপদের সাথে কৃদন্ত পদের (কৃৎ প্রত্যয়ান্ত পদ) যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। এক্ষেত্রে প্রথমে উপপদ এবং পরে কৃদন্ত পদ বসে। বিভক্তি যুক্ত ক্রিয়াপদকে এক্ষেত্রে সাধারণত কৃদন্ত পদ বলা হয়।

উদাহরণঃ 

• বেতন ভোগ করে যে=বেতনভোগী

• ভেক ধরে যে=ভেকধারী

• ইঁদুর মারা যায় এমন বিষয়=ইঁদুরমারা

• মাছি মারা যায় এমন বিষয়=মাছিমারা

• মধু করে যে=মধুকর

• আকাশে চারণ করে যে=আকাশচারী 

৮. নঞ তৎপুরুষঃ বাংলায় না, নাই, অথবা নয় এর অর্থে সংস্কৃতে ‘নঞ’ প্রত্যয় আছে। না-বাচক পূর্বপদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষণ রূপে পরপদের যে সমাস হয় তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদে অ, অন, অনা, আ, গর, ন, না, বি, বে এসব বসে না অর্থ প্রকাশ করে।

উদাহরণঃ 

• নয় কথ্য=অকথ্য

• অভিজ্ঞ=অনভিজ্ঞ

• নয় উর্বর=অনুর্বর

• নেই নাথ=অনাথ

• নয় পবিত্র=অপবিত্র

• নয় মানুষ=অমানুষ

• নেই খুঁত=নিখুঁত

• নয় চেনা=অচেনা 

৯. অলুক (অলোপ) তৎপুরুষঃ তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না হলে তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। প্রায় সবগুলো তৎপুরুষ সমাসে অলুক হয়ে থাকে।

উদাহরণঃ 

• সোনার তরী= সোনারতরী

• ছেলেকে ভোলানো= ছেলে-ভোলানো

• তেলে ভাজা= তেলেভাজা

• লোককে দেখানো= লোক দেখানো

• খেলার মাঠ= খেলার মাঠ

• লুচিকে ভাজা= লুচি-ভাজা