ভূমিকাঃ “ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানুষের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের সর্বোত্তম সময়। ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল জ্ঞানার্জন করে একজন আদর্শ মানুষ হওয়া। দেহ এবং মনের যথার্থ বিকাশ ঘটার মধ্য দিয়েই চরিত্রের পূর্ণবিকাশ সম্ভব হয়। দেহ ও মনের সঠিক বিকাশ ঘটাতে হলে মন থেকে আলস্য, ক্লান্তি এবং জড়তাকে নির্মূল করতে হবে, আর তা করতে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। ইংরেজিতে প্রবাদই আছে – ” All work and no play makes Jack a dull boy.”

বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলাঃ প্রকৃতপক্ষে পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধুলার কোনো বিরোধ নেই। অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা কিন্তু রুগ্ন শরীরে নিরানন্দ মনে সেই তপস্যায় সফল হওয়া যায় না। বিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমনি মনও থাকে নির্মল ও আনন্দময়। 

চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে খেলাধুলার ভূমিকাঃ চরিত্রগঠনে খেলাধুলার একটি গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সময় সচেতনতা,পারস্পরিক সহযোগিতাবোধ, নীতিবোধ, সততা ইত্যাদি মানবচরিত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলার মাধ্যমে অর্জন করে থাকে। 

খেলাধুলা ও নিয়মানুবর্তিতাঃ মাঠে খেলার সময় সমস্ত খেলোয়াড়দের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সময়মত খেলার অভ্যাস করা,  নিয়মিত অভ্যাস করা, সঠিক সময়ে মাঠে উপস্থিত থাকা, নিয়ম মেনে খেলায় অংশগ্রহণ করা- ইত্যাদি নিয়মগুলির মধে দীর্ঘদিন থাকার ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা শৃঙ্খলাবোধ তৈরি হয় যা পরবর্তী জীবনের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। 

খেলাধুলা ও ভ্রাতৃত্ববোধঃ খেলাধুলা আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা এবং একাত্ববোধের শিক্ষা নিয়ে আসে। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা নিজের দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার শিক্ষা পাই। খেলার মধ্যে দিয়ে মন উদার হয়ে ওঠে। আজকের যুগ যখন রাজনীতির কলহে কলুষিত, তখন একমাত্র খেলাই ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা নিয়ে আসে। শুধুমাত্র খেলোয়াড়রা নয়, খেলা দেখতে আসা প্রতিটি দর্শকই কোনো না কোনো দলকে সমর্থন করে এবং চায় তার প্রিয় টিম খেলায় জিতুক। জয়-পরাজয়কে স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করতে শেখে যা অতি সহজে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের জয়-পরাজয়গুলোকেও মেনে নিতে শেখায়।

খেলাধুলা ও পারস্পরিক সহযোগিতাঃ খেলোয়াড়েরা যখন মাঠে নামেন, তখন তারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের কথা ভাবেন না। প্রতিটি দলের খেলোয়াড়েরাই নিজেদের দলের কথা ভাবেন। সেক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এইভাবে মাঠে খেলতে খেলতে একসময় তারা ব্যক্তি জীবনেও সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সত্য  উপলব্ধি করে।

খেলাধুলা ও আত্মবিশ্বাসঃ খেলাধুলা নিজের উপর আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসে। খেলাধুলা আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ তৈরি হয়, শৃঙ্খলা তৈরি করে চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস। খেলার মধ্য দিয়ে একাগ্রতা, ধৈর্য্য, দক্ষতা, সাহস, সহ্যশক্তি এবং উদারতা অর্জন হয়। 

খেলাধুলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিঃ কোনো একটি খেলায় কোনো বিশেষ ধর্মের খেলোয়াড়েরাই খেলে না। সব ধর্মের খেলোয়াড়েরাই খেলতে পারে। তারা যখন মাঠে নামেন তখন তারা কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতিনিধি হয়ে মাঠে নামেন না। তারা তারা তাদের প্রতিষ্ঠান বা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ফলে সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামির কোনো জায়গাই থাকে না। এইভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি হয়।

খেলাধুলা ও সততাঃ সততা একজন ব্যক্তির চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।  জীবনে সততার মূল্য অপরিসীম- এই কথাটিও হৃদয়ঙ্গম করানোর ক্ষেত্রে খেলাধুলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কোনো খেলাধুলাতেই অসদাচরণ বা অসৎ উপায়ের কোনোও স্থান নেই। এইসব কু-মনোভাবের সহায়তায় সাময়িকভাবে খেলোয়াড়রা জয়ী হলেও অবিলম্বে তাদের স্বরূপ প্রকাশিত হবেই।  

উপসংহারঃ চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা অপরিসীম। খেলাধুলা আমাদের দৈহিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটনোর পাশাপাশি আমাদের মানসিক কাঠামোকে আরও সুন্দর করে তোলার মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের অধিকাংশ স্কুল এবং কলেজগুলোতে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার যথোপযুক্ত কোনোও ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া আজকের ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই মাঠের খেলা ছেড়ে মোবাইল ফোনের গেম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত। ফলে আগেকার দিনের মত খেলাধুলা করার অভ্যাস আজকাল আর দেখা যায় না। ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রগুলিতে আমাদের দেশের ব্যর্থতার চিত্র করুণ হয়ে ওঠে। তাই খেলাধুলার সামগ্রিক উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং পাশাপাশি দেশবাসীর প্রত্যেকেরই  উচিত খেলাধূলার দিকে এগিয়ে যাওয়া।

অনুরূপ প্রবন্ধ - চরিত্র গঠন ও খেলাধুলা, চরিত্র গঠনে খেলাধুলার গুরুত্ব, ছাত্রদের চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা ও গুরুত্ব,