বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: নীল কন্ঠ যার= নীলকন্ঠ (শিব)

  • বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়।
  • ব্রীহি কথাটির অর্থ হল ধান
  • বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ/ পরপদের অর্থ বোঝায় না।

বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার ও কি কি?

বহুব্রীহি সমাসকে সাধারণত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়।

  • ১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
  • ২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি
  • ৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি
  • ৪। নঞ্ বহুব্রীহি
  • ৫। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
  • ৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
  • ৭। অলুক বহুব্রীহি
  • ৮। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
  • ৯। সহার্থক বহুব্রীহি
  • ১০। নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস

এই ১০ প্রকার বহুব্রীহি সমাস সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

পূর্বপদ বিশেষণ আর পরপদ বিশেষ্য / পূর্বপদ বিশেষ্য এবং পরপদ বিশেষণ হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি হয়।

উদাহরণঃ

বিশেষণ+ বিশেষ্য

  • গৃহে স্থিতি যার= গার্হস্থ
  • নীল কন্ঠ যার = নীলকন্ঠ

বিশেষ্য+ বিশেষণ

  • কান কাটা যার= কানকাটা
  • ঠোঁট কাটা যার= ঠোঁটকাটা
  • পেট মোটা যার= পেটমোটা

২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি

বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়ে বিশেষ্য হয়, তবে তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি বলে।

উদাহরণঃ

• বীণা পাণিতে যার= বীণাপাণি

• কথা সর্বস্ব যার= কথাসর্বস্ব

• দুই কান কাটা যার=দু কানকাটা

• শূল পাণিতে যার = শূলপাণি

• চন্দ্র চূড়ায় যাঁর = চন্দ্রচুড়

• রত্ন গর্ভে যার = রত্নগর্ভা

৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি

ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং পরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়।

উদাহরণঃ

• হাতে হাতে যে যুদ্ধ= হাতাহাতি

• কানে কানে যে কথা= কানাকানি

• লাঠিতে লাঠিতে যে লড়াই= লাঠালাঠি

• চোখে চোখে যে দেখা = চোখাচোখি 

• গলায় গলায় যে মিল= গলাগলি

৪। নঞ্ বহুব্রীহি

বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্ অব্যয় ( না, নেই, নয়, নাই) যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে, তাকে নঞ্ বহুব্রীহি বলে। নঞ্ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়।

উদাহরণঃ

• নাই জ্ঞান যার= অজ্ঞান

• নাই তার যার = বেতার

• নেই আদব যার= বেয়াদব

• নেই উপায় যার = নিরুপায়

• নেই অন্ত যার = অনন্ত

৫। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি

বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে।উদাহরণঃ

• জন্মাষ্টমী= জন্ম হয়েছে অষ্টমীর দিনে যার

• চাদের মত সুন্দর মুখ যার= চাঁদমুখ

• চন্দ্র বদন মুখ যার = চন্দ্রবদন

• মৃগের মত নয়ন যার= মৃগনয়না

• গজের মত আনন যার=গজানন

৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি বলা হয়।

উদাহরণঃ

• এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার= একচোখা (চোখ+আ)

• ঘরের দিকে মুখ যার= ঘরমুখো (মুখ+ও)

• তিন (তে) ভাগ যার= তেভাগা (ভাগ+আ)

• দুই দিকে মন যার =দোমনা

• দুই তল আছে যার= দোতলা

৭। অলুক বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।

উদাহরণঃ

• গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে =গায়েহলুদ

• হাতেখড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= হাতেখড়ি

• মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মুখেভাত

৮। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে, তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়।

উদাহরণঃ

• দশ আনন যার = দশানন(রাবণ)

• দশ ভুজ (হাত) যার = দশভুজা (দূর্গা)

• চার পায়া যার= চারপায়া(টেবিল)

• ত্রি নয়ন যার = ত্রিনয়ন (শিব)

• পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন

৯। সহার্থক বহুব্রীহি

সমাস সহার্থক পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।

উদাহরণঃ

• বান্ধবের সহিত বর্তমান = সবান্ধব

• স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক

• পুত্রের সহিত বর্তমান=সপুত্র

• পরিবারের সহিত বর্তমান= সপরিবার

• অর্থের সহিত বর্তমান= সার্থক

• শব্দের সঙ্গে বর্তমান = সশব্দ

• লজ্জার সঙ্গে বর্তমান = সলজ্জ

১০। নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাস কোন নিয়মের অধীনে নয়, তাকে নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি বলা হয়।

উদাহরণঃ

• দুদিকে অপ যার=দ্বীপ

• অন্তর্গত অপ যার =অন্তরীপ

• নরাকারের পশু যে= নরপশু

• জীবিত থেকেও যে মৃত= জীবন্মৃত

• পণ্ডিত হয়েও যে মূর্খ= পণ্ডিতমূর্খ